ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে ১০কিঃমিঃ দক্ষিণে কসবা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তের সন্নিকটে কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে যদিও এটা কোল্লাপাথর গণ কবস্থান নামে পরিচিত। প্রশ্ন হতে পারে এই সমাধিস্থলের নাম কোল্লাপাথর হল কেন? কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের কোল্লাপাথর গ্রামের নামের এই সমাধিস্থলের নাম করন করা হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ সংগ্রহ করে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে স্থানীয় অধিবাসী আঃ মান্নান সাহেবের নিজস্ব মালিকাধীন পাহাড়ের চূড়ায় ৫১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়। এই ৫১ মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি, বাকি সবার পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে প্রতিটা কবরের পাশে নেইমপ্লেট লাগানো আছে। ব্রাহ্মমণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও কিশোরগঞ্জ থেকে এসে ৩ নং সেক্টরের আওতায় অপারেশন চলাকালীন ওনারা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে কোন ধর্ম বর্ণ পার্থক্য ছিলনা তা এইখানে সমায়িত কবরগুলোকে দেখলেই পরিষ্কার বুঝা যায়। আমি যখন শহীদদের করবগুলো দেখছিলাম তখন খেয়াল করলাম এইখানে ২ টি কবর আছে যাদের নাম দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম তারা হিন্দু ধর্মের ছিলেন। কিন্তু দেখেন, হিন্দু ও মুসলিম একসাথে দেশের জন্য জীবন দিয়ে পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন।
এই বিজয়ের মাসে লাখো কোটি বার সালাম জানাই যারা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে আমাদের আজকের বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন।
এইখানে আসলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি আর দেখতে পাবেন শালদানদী গ্যাসক্ষেত্র ও নদীর ওপাড়ে ভারত সীমান্ত ফাঁড়ি।
কিভাবে আসবেন?
ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে করে ব্রাহ্মমণবাড়িয়া তারপর সিএনজি করে কসবা বায়েক অথবা সরাসরি কোল্লাপাথর।
কুমিল্লা থেকে ট্রেনে অথবা সিএনজি করে শালদানদী স্টেশন নেমে রিকশা, সিএনজি, টুক টুক করে যাওয়া যায় ।
খাওয়া?
এই যায়গায়টা ব্রাহ্মমণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা থেকে দূরত্ব বেশী না হওয়ায় তেমন একটা হোটেল মোটেল গড়ে উঠেনি। সবাই দিনে এসে দিনেই চলে যায়। তবে এইখানে হাল্কা খাবার খাওয়ার জন্য আইসক্রিম, ফাস্টফুডে ও ফুচকা-চটপটির পরিপাটি করা দোকান আছে।
থাকা?
কেউ যদি থাকতে চান তাহলে এইখানে শুধু মাত্র জেলা পরিষদের একটা রেস্ট হাউজ আছে। সুন্দর গোছানো একটা রেস্ট হাউজ।
গাড়ী পার্কিং?
রেস্ট হাউজ ও সমাধিস্থলের পাশেই ছোট একটা সবুজ মাঠ আছে, এটাতেই সকল গাড়ি পার্ক করে রাখা যায়। কোন প্রকার পার্কিং চার্জ নাই।
ইতিহাসকে জানুন, বাংলাদেশকে জানুন, দেশ ঘুরে বেড়ান। হ্যাপি ট্রাভেলিং।
কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল | ব্রাহ্মমণবাড়িয়া |
কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল | ব্রাহ্মমণবাড়িয়া |
মন্তব্যসমূহ